শাহসূফী সৈয়দ আমিরুজ্জমান শাহ্ (ক.)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী (আমির ভাণ্ডার দরবার শরীফ)
শাহিনশাহে বেলায়ত হযরত আমিরুল আউলিয়া
শাহসূফী সৈয়দ আমিরুজ্জমান শাহ্ (ক.)’র
সংক্ষিপ্ত জীবনী
****************
***************
হযরত সৈয়দ হামিদ উদ্দীন গৌড়ী (র.)‘র তিন ছেলে। তন্মধ্যে একজন ফটিকছড়ি থানার অন-র্গত ইছাপুর গ্রামে গমন করেন। সেই বংশধারায় সৈয়দ মতিউল্লাহ্ শাহ্ জন্ম গ্রহণ করেন এবং তাঁরই ঔরশজাত পুত্র হলেন মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকার প্রবর্তক ইমামুল আউলিয়া গাউসুল আ’যম শাহসুফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (ক.) হযরত গৌড়ী (র.)’র দ্বিতীয় ছেলে তাঁর নিজ বাড়ী হাইদগাঁও গ্রামস’ কাযী বাড়ীতে বসবাস করতেন। তাঁর নছল থেকে চির কুমার শাহেন শাহ্ হযরত সৈয়দ আকবর শাহ্ (ক.) জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত হামিদ উদ্দীন গৌড়ীর (র.)’র সর্বকনিষ্ট পুত্র সন-ান হযরত সৈয়্যদ মা’দন শাহ্ এবং তদীয় পুত্র সৈয়্যদ আমিরউদ্দীন শাহ্ আমির ভাণ্ডার পুরান বাড়ীতে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁর পুত্র সৈয়দ কাজী মুহাম্মদ আরেফ মিয়াজী তৎপুত্র সৈয়দ কাজী মুহাম্মদ মওলা চাঁদ শাহ্ (রহ.) এবং তাঁরই বড় পুত্র হলেন- হযরত সৈয়্যদ আমিরুজ্জমান শাহ্ (ক.); যিনি পরবর্তী কালে ‘আমিরুল আউলিয়া’ নামে জগতে প্রসিদ্ধ হন।
জন্মকাল পরিচিতি
চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার অন-র্গত গোবিন্দারখীল গ্রামটি ছিল অন্যান্য সাধারণ গ্রামের ন্যায় অতি সাধারণ একটি গ্রাম। সেই অখ্যাত- গ্রামের এক সম্ভ্রান- কাজী ও সৈয়্যদ পরিবারে এক মহা শুভলগ্নে ১৮৪৫ ঈশাব্দ মোতাবেক ১২৫২ সনের ১লা চৈত্র, তারিখ রোজ বিষুদবার এই মহান সাধক হাজত রাওয়া মুশকিল কোশা হযরত মাওলানা কাজী সৈয়দ আমিরুল আউলিয়া শাহ আমিরুজ্জমান (ক.) শুভ জন্ম লাভ করেন। মহান বুজুর্গ শ্রদ্ধেয় কাজী সৈয়দ শাহ মওলাচন্দ (র.) আমিরুল আউলিয়ার পিতা এবং শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ রমনী শামসুন নাহার বেগম ছিলেন তাঁর আম্মাজান। পটিয়ার এতিহ্যবাহী বাহুলী গ্রামের প্রাচীন তম মল্ল বংশীয় পরিবারের একজন পর্দানশীন ও পরহেজগার রমনী হিসেবে শ্রদ্ধেয় মা শামসুন নাহার বেগমের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। তাঁর পিতামহ হযরত আমিরুদ্দীন (র.) দ্বীনি খেদমতের উদ্দেশ্য নিয়ে গোবিন্দারখীল গ্রামে শুভাগমন করেছিলেন। পরবর্তী কালে স’ানীয় স্বনাম ধন্য ‘হাদু চৌধুরী মসজিদে’ ইমামতি পদে নিয়োজিত থেকে হেদায়তের পথে নিজেকে সম্পূর্ণ রুপে সমর্পিত করে ছিলেন। হযরত মাওলা চাঁন্দ (র.) এর পূর্ব পূরুষ ছিলেন হযরত মওলানা কাজী সৈয়্যদ হামিদ উদ্দীন গৌড়ী (র.) ইনি হযরত সৈয়্যদ ইমাম জয়নাল আবেদীন (র.) এর পূত্র বংশীয় বংশধর ছিলেন। তৎকালীন ভারতের গৌড় নগরের বিচারালয়ে মুসলিম নবাব বর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে তিনি কাজীপদে অধিষ্টিত হন। এক মহাদূর্যোগের ফলে তৎকালীন গৌড়রাজ্য প্রায় ধ্বংস স’পে পরিণত হয়ে জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১৫৭৫ ঈসাব্দ সনে কাজী সৈয়্যদ হামিদ উদ্দীন গৌড়ী (র.) হেদায়তের সর্বোত্তম মঞ্চ তথা অদ্ধিতীয় শানি- অপূর্ব নগরী চট্টগ্রামে শুভ পর্দাপন করেন। তিনি সর্ব প্রথম চট্টগ্রাম জেলায় পটিয়াধীন শ্রীমতিখালের উত্তর পূর্ব সবুজ ছায়া বিশিষ্ট একটি গ্রামে স’ায়ী ভাবে বসবাস করেন এবং ইমামতি কাজেরত থেকে হেদায়ত কার্য পরিচালনা করেন, পরবর্তীতে ঐ নাম না জানা অখ্যাত গ্রামটি তাঁর নামে প্রতিষ্টিত হয়ে বর্তমান অবধি হামিদগাঁও নামে সু-প্রচারিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে যদিও তাঁর পরিচিতি মূলক কাগজ পত্র সমুহ নষ্ট হয়ে গেছে তাঁর পরও ইনার বংশধরগন কর্তৃক সৈয়্যদ পরিবারের নিদর্শন সমুহ বার বার উদ্ভাসিত হয়ে উঠে, এই মহান বুজুর্গের এক সুযোগ্য সন-ান ফটিকছড়ি থানার আজিম নগরে ইমামতি করার লক্ষে শুভ পদার্পন করে হেদায়ত কার্য পরিচালনা করেন।
সৈয়দ পরিবারের অন্যতম নিদর্শন বিশ্ব গাউসুল আ’যম নাম ধারী সৈয়্যদ শাহ্ আহমদ উল্লাহ আল মাইজভাণ্ডারী (ক.) একজন সৈয়্যদ হামিদ উদ্দীন গৌড়ী (ক.) এর অন্যতম ওয়ারিশদের মধ্যে মাদার জাত অলিআল্লাহ্ আকবর শাহ্ (র.) একজন এছাড়া হামিদগাঁও থেকে হাদু চৌধুরী মসজিদের পূর্বের (বর্তমান আমির ভাণ্ডার পুরানবাড়ী) একটি এলাকায় তাঁর অন্যএক সন-ান স’ায়ীভাবে বসবাস করেন সূযোগ্য আওলাদ হযরত কাজী সৈয়্যদ মাওলা চাঁন্দ (রহ.) ইনিই হযরত আমিরুল আউলিয়ার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান। হযরত মাওলা চাঁন্দ (রহ.) স’ানীয় লোকজনের কাছে অতি সম্মানের পাত্র ছিলেন। বিভিন্ন বিচার কার্যে তাকে বিচারক নিয়োগ করা হতো এবং পাল্কি যোগে তাঁকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হতো। তৎকালীন সময়ে সম্মানীত পরিবার বর্গের সদস্যদেরকে পাল্কীযোগে আনানেয়া হতো, হযরত মাওলা চাঁন্দ (র.) এর অন্য সন-ান সৈয়্যদ আশরাফুজ্জমান তিনি ও পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। প্রাথমিক প্রাক্কালে তিনি বড় ভাই আমিরুল আউলিয়ার মারফতের গোপন ভেদ সমুহ বুঝতে অক্ষম ছিলেন এবং শরিয়ত ছাড়া অন্য কিছু বুঝতেন না। পরবর্তী সময়ে অলি সম্রাট বিশ্ব গাউসুল আযম মাওলানা শাহ আহমদ উল্লাহ (ক.) সু-পরামর্শে বড়ভ্রাতা শাহ্ আমিরুজ্জমান (ক.) এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং ফয়েজ প্রাপ্ত হন। হযরত মাওলা চাঁন্দ (রহ.) এবং তাঁর সহধর্মীনি মোহতারেমা শামসুন নাহার বেগম আল্লাহর কাছে নামাজানে- প্রায়ই মোনাজাত করতেন তাদের মাধ্যমে যেন আল্লাহ পাক এক মহান কামেল ব্যক্তি প্রেরন করেন। তাঁদেরই দোয়ার ফলে এই মহান বুজুর্গ শাহ্ আমিরম্নজ্জমান (ক.) এই ধরাধামে শুভ পর্দাপন করেন। আমিরুল আউলিয়া যে স’ানে জম্ম গ্রহণ করেন তাঁর উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমে অমুসলিম ভদ্রলোকদের এবং পূর্বে মহান স্ববংশীয় মাদার জাত অলি আকবর শাহ্ আউলিয়া (র.)। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন এই রূপ পরিবেষ্টিত এলাকায় তাঁর প্রিয় হাবিবের এক আওলাদকে পাঠালেন যার উছিলায় হাজার লক্ষ পাপী-তাপী যেন উদ্ধার পোতে পারে সে দিন যেন আকাশে বাতাশে তারঁই প্রশংসার সমস্বরে আওয়াজ হতে থাকে
মারহাবা ছদ-মার হাবা ছদ- মারহাবা ছদ- মারহাবা
আজ বরায়ে শাহ্ আমির ছদহাজারা মারহাবা।
আমিরুল আউলিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা:
হযরত আমিরুল আউলিয়া শাহ্ আমিরুজ্জমান (ক) শিশু কাল থেকেই ছিলেন অত্যন- ধর্মভীরু । তিনি অন্যান্য শিশুদের মত হৈ চৈ পছন্দ করতেন না। অত্যন- ভদ্র ও নিরবের সাথে চলতেন। অন্য শিশুদের সাথে ঝগড়া ঝাটি করতেন না। সব সময় কি যেন চিন-ায় থাকতেন। এই ভাবে চার পাঁচ বছর অতি বাহিত হবার পর স্নেহময়ী মায়ের আন-রিক প্রচেষ্টায় তিনি স’ানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হন। উক্ত মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন তাঁরই স্ব বংশীয় উর্দ্ধতন মহাপুরুষ হযরত কাজী সৈয়্যদ হামিদ উদ্দীন গৌড়ী (রহ.) এর সুগোগ্য বংশধর কামেল অলি আল্লাহ কাজী সৈয়্যদ ইমাম শরফুদ্দিন (র.) উক্ত মাদ্রাসায় এই মহান পুরুষের কাছে আমিরুল আউলিয়া (ক) পবিত্র কোরআন, হাদিস, তরজুমা সহ আরবী, উর্দ্দু ও ফার্সি শিক্ষা লাভ করেন। স’ানীয় ভাবে আরও কিছু লেখাপড়া করার পর উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তৎকালীন দেশ বরণ্য প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক শিক্ষাবিদ গণের কাছে গিয়ে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন। যখন আমিরুল আউলিয়া বয়স মাত্র দশ/এগার বছর তখনই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান মাওলা চাঁদ (র.) কে এই ধরাধাম থেকে উঠায়ে নেন, এতে করে আমিরুল আউলিয়া (ক) পরিবারে হঠাৎ করে অভাব নেমে আসে। তার স্নেহময়ী মা সব সময় আল্লাহর এবাদতে নিজেকে মশগুল রাখতেন তিনি অনেক কষ্টের বিনিময়ে আদরের সন-ান কে লালন পালন করতে লাগলেন। অভাব অনটনের কারনে শিশু আমিরুল আউলিয়া কে আর লেখাপড়া করাতে পারেননি। অবশেষে আমিরুল আউলিয়া পিতার সামান্য যে টুকু ধানি জমিন ছিল সে টুকুতে ফসল উৎপাদনের কাজে নেমে পড়লেন।
একদিন বালক আমিরুজ্জমান ধানের ক্ষেতে কাজ করছিলেন। সেই সময় হামিদ গাঁও নিবাসী স্ব’বংশীয় উর্দ্ধতন মহান অলি আল্লাহ হযরত সৈয়্যদ আকবর শাহ্ (রহ.) ঐ পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি ধানের ক্ষেতে বালক আমিরুজ্জ্মান শাহ্ কে কাজ করতে দেখে অত্যন- রাগান্বিত হন এবং জালালিয়ত হালে বলেন তোর কাজ কত কেউ করবে তুই কেন এই কাজ করছিস? তোকেতো আল্লাহ এই কাজের জন্য পাঠাননি অতঃপর বালক আমিরুজ্জমান ভয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। তখন থেকে বালক আমিরুজ্জমান সব সময় অন্যমনস্ক ভাবে সময় কাটাতেন মা শামসুন নাহার পুত্রের এই সব কার্যকলাপ দেখে অত্যন- বিচালিত হয়ে পড়েন, যেহেতু পরিবারের বড় সন-ান এই ভাবে অভাবের সংসারে বসে থাকলে অন্য ছোট ভাই বোনের কি হবে? কার উছিলায় আসবে? এত বড় সংসারে কি ভাবে তিনি এত গুলোমুখে আহার তুলে দেবেন? তারপরও তিনি আল্লাহর উপর সর্ম্পূন ভরসা রাখলেন। কারন বালক আমিরুজ্জমান এর মধ্যে তিনি আল্লাহ প্রেমের অনেক নিদর্শন ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছেন। যাতে করে এই বিষয়ে নিশ্চিন- হয়ে বলেন এই ছেলে একদিন আউলিয়া রূপে পরিগনিত হবেন। এ ছাড়া মহান আউলিয়া আকবর শাহ (র.) এর জজ্বায়ী কালাম তিনি অনুধাবন করেছেন। এই ছেলে ভবিষ্যতে যে আল্লাহর দরবারে মহান পুরুষ হিসেবে গণ্য হবেন তাতেই আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তিনি তায় দু’হাত তোলে আল্লাহর দরবারে বালক ‘আমিরুজ্জমান’ এর জন্য দোয়া করতেন। যাতে করে তার স্বপ্ন অনুমান এবং হযরত আকবর শাহের বানী সত্যে পরিণত হয়। এই ভাবে দু’এক বছর অতিবাহিত হবার পর একদিন আল্লাহর হুকুমে স্নেহময়ী মা শামসুন নাহার এই ইহধাম ত্যাগ করে পরপারে চলে যান।
আমিরুল আউলিয়া (ক) কৈশোরিক অবস’া ঃ
শ্রদ্ধেয় আম্মাজানকে হারিয়ে হযরত শাহ্ আমিরুজ্জমান (ক) কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। কিন’ তিনি মনে মনে অন্য এক জগতের সন্ধান লাভ করেন। যে কারণে মাতৃ বিয়োগের কথা তাঁর মনে বেশী দিন স’ায়ী হল না। এক নতুন জগত তাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকল। আর কে যেন বলতে লাগলেন হে আমিরুজ্জমান (ক) তোমাকে যে কাজের জন্য জগতে পাঠানো হয়েছে তুমিতো সেই কাজ এখনও আরম্ভ করোনি! এর পর থেকে তিনি আরও বেশিবেশি ইবাদত করতে লাগলেন। আর দিন দিন সংসারের প্রতি অনিহা প্রকাশ করতে লাগলেন মাঝে মধ্যে ঘর থেকে উদাও হয়ে যেতেন বিভিন্ন মাজার মসজিদে গিয়ে রাত কাটাতেন। এমতাবস’ায় তার একমাত্র ছোট ভাই আশরাফুজ্জমান সংসারের হাল ধরেন। এই ভাবে কয়েক বছর গত হবার পর তিনি রাউজানের কদলপুর গ্রাম নিবাসী হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ শাহ্ (রা.) এর কাছে গমন করেন। কিছু কাল উনার কাছে থেকে মারফতের গোপন তথ্যাদি জেনে নেন। মাওলানা আবদুল আজিজ শাহ্ (রা.) হযরত আমিরুজ্জমান শাহ্ (ক.) কে মারফতের গোপন বিষয়াদী শিক্ষা দেবার পর স্ব সম্মানে তাহাঁকে বিদায় জানান, এরপর তিনি ইসলামী শিক্ষার কারণে পটিয়াস’ বড়লিয়া গ্রাম নিবাসী মাওলানা সৈয়্যদ আবদুর রশিদ শাহ্ (রা.)এর নিকট যান এর কিছু দিন পর তিনি আনোয়ারার দেয়াংস’ কি পাইনগর নিবাসী অলিয়ে কামেল মাওলানা আলী আজগর শাহ্ (রা.) কে বুজুর্গ ওস-াদ হিসেবে মেনে নেন এবং তাঁর কাছে এলমে মারফতের শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই সময়ে আমিরুল আউলিয়া (ক) আধ্যাত্মিক শক্তি হাছিল হয়। কিন’ এত কিছুর পরও আমিরুল আউলিয়া (ক) এর যেন তৃপ্তি মিট্লোনা। কিসের স্পর্শ পাবার জন্য যেন তাঁর আধ্যাত্মিক মন বিচলিত হয়ে উঠল। তাঁর এই অবস’া অবলোকন করে বুজর্গ ওস-াদ মাওলানা আলী আজগর শাহ্ (রা.) তাকে পাশে ডেকে বসালেন এবং বললেন হে আমার আদরের দুলাল আমার কাছে যা ছিল (রুহানী খোরাখ) সবই তোমাকে দিয়েছি। কিন’ তোমার এবাদত ও আগ্রহ অনুযারী এই পাওনা যথেষ্ট হয়নি। তোমার আগ্রহ ও আকাংঙ্খা মেটানোর জন্য তুমি অবিলম্বে ইছাপুর নিবাসী হযরত গাউসুল আজম আহমদ উল্লাহ (ক.) এর সান্নিধ্যে চলে যাও। সেখানেই তোমার মনস্কামনা পুরণ হবে। অতঃপর হযরত আমিরুল আউলিয়া (ক.) বুজর্গী উস-াদ আলী আজগর শাহ্ (রা.) এর থেকে আদরের সাথে বিদায় গ্রহণ করেন।
হযরত আমিরুল আউলিয়া (ক.) এর বিবাহিত জীবন
হযরত আমিরুল আউলিয়া শাহ্ আমিরুজ্জমান (ক) তাঁর পবিত্র যুগের অতীব ধার্মিক জীবনে তিন বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর প্রথম বিবি হযরত ওয়াজ খাতুন (রা.) এই মহিয়সী নারী স’ানীয় ভক্তবৃন্দের কাছে মা ছাহেবানী হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। উল্লেখ্য যে তিনি তার প্রিয় স্বামী আমিরুজ্জমান কেবলাকে কেবল স্বামী হিসেবে কবুল করেননি বরং স্বামীকে তিনি পীর হিসেবেও কবুল করেছেন। সংসারের প্রতি আমিরুল আউলিয়া (ক) এর অনিহা দেখে এবং তাঁর আধ্যাত্মিক ভাবনা চিন-ার মর্ম বুঝতে পেরে তিনি স্বামীকে নিশ্চিত মনে ইবাদত করার জন্য এবং গাউসূল আযম মাইজভাণ্ডারী হযরত কেবলার দরবারে গিয়ে স্ব ইচ্ছা পূরণ করার জন্য উৎসাহ দিতেন। জানা যায় যে, এই মহিসসী নারী অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতেন। অথচ স্বামীকে আল্লাহ্ প্রাপ্তির পথে এগিয়ে যেতে নিজ সুখ-শানি- এমন কি স্বামী সোহাগ থেকেও নিজেকে বঞ্চিত করে তিনি আমিরুজ্জমান (ক) কে সর্ম্পূন রূপে আল্লাহর পথে ছেড়ে দিয়েছেন। আমিরুল আউলিয়া (ক) পরবর্তীতে এই মহিয়সী নারীকে ভক্ত বৃন্দের কাছে অত্যন- সম্মানের সাথে পরিচিত লাভ করান। এমন কি আমির ভাণ্ডার পুরান বাড়িতে এই মহিয়সী নারীর মাজার স’াপিত হয়েছে। এই মহিয়সী নারীর গর্ভে একপুত্র জানে আমির হযরত সোলায়মান শাহ্ (রা.) ও তিন কন্যার জন্ম হয়। এর পর দ্বিতীয় স্ত্রী রূপে হযরত বিবি ফাতেমা খাতুন (রা) কে গ্রহণ করেন। এই মহিমসী নারীও আধ্যাত্মিক সাধনা ক্ষেত্রে স্বামীকে বাধাঁদান করেননি। তিনিও স্বামীকে পীর হিসেবে সম্মান জানাতেন। ইনার গর্ভে এক পুত্র মাহবুবে ইলাহী হযরত খলিলুর রহমান শাহ্ (রা) ও এক কন্যার জন্ম হয়। প্রিয় মুর্শেদে বরহক হযরত আহমদুল্লাহ আল্ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর হুকুম প্রাপ্ত হয়ে ৬৩ বছর বয়সে তিনি হযরত লাইলা জান খাতুন (র.) কে তৃতীয় স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেন। ইনার গর্ভে চার পুত্র (১) মকবুলে খোদা মাহেবুবেনবী মুনাজেরে আহলে ছুন্নাত হযরত মাওলানা সৈয়্যদ হাবিবুর রহমান শাহ্ (র.) (২) হাকিমে ত্বরিকত শাহছুফী সৈয়্যদ ডা. মোজেহেরুল হক শাহ্ (র.) (৩) হযরত মাছুম.সৈয়্যদ লোকমান হাকীম শাহ্ (র.) (৪) আতায়ে আমির মুনাজেরে আহলে ছুন্নাত মুফতি সৈয়্যদ হারুন রশিদ শাহ্ (রা) ও দুই কন্যা জন্ম হয়। এই ছয় পুত্রকে তিনি ছয়টি ফুল তথা উচ্চতর অলি হিসেবে আখ্যায়িত করে ভবিষ্যত বানী দিয়ে গেছেন। আমিরুল আউলিয়ার ত্বরীকার প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে তার ছয় শাহজাদা গণ যে অক্লান- পরিশ্রম ও রেয়াজতের দৃষ্টান- রেখে গেছেন পরবর্তীতে এর সুফল হিসেবে আমরা বর্তমান আমির ভাণ্ডার শরীফে হেদায়েত ময়ীরূপ দর্শন করতে পারছি।
ইন্তিকাল
হযরত আমিরুল আউলিয়ার শাহসূফী সৈয়দ আমিরুজ্জমান শাহ্ (ক) একদিন মজলিসে উপসি’ত মুরিদ ভক্ত-অনুরক্তবৃন্দের সামনে একথা বললেন যে আমি দুনিয়াতে এমন একটি কাজ করে যাচ্ছি যা কেউ করেনি। আমি জীবদ্দশায় আমার মাজার তৈরী করেছি। আমাকে রাখার জন্যে তাবুত (গাছের পাত্র) তৈরী করেছি। সেই তাবুতের পিছনের দিকে দরজার ন্যায় খোলা রেখেছি, যাতে করে উক্ত দরজা দিয়ে কফিন সহজে ঢুকানো যেতে পারে। তাবুতের দক্ষিণ দিকে আয়না লাগিয়েছি যাতে করে আমার আশেক ও ভক্তবৃন্দ আমাকে যে কোন সময় দেখতে পারে। কোন ভক্তের বাড়ী কিংবা অন্য কোথায় যদি কেউ নিতে পারবে, সেজন্য তাবুতে চাকা লাগানো হয়েছে। যা টানলে গাড়ীর ন্যয় চলবে, পথে যদি খাল বা জলাশয় পড়ে থাকে তাহলে উক্ত তাবুতের দু’পাশে দু’চারটি কড়া (হুক জাতীয়) লাগানো হয়েছে। যাতে কাঁদে করে পার করা যায়। যাতে কাজ সেরে পূনরায় তাবুত যথাস’ানে এনে রেখে দিতে পারে।
আমার দেহ থেকে যেদিন প্রাণ বের হয়ে যাবে উক্ত তাবুতে আমার দেহখানি রাখা হবে। জানাযায় ইমামতি করবে আমার বড় ছেলে মুহাম্মদ সোলায়মান শাহ্ । জানাযা শেষে আমাকে আমার ঘরের ছাদের উপর কফিনসহ ছয় মাস রেখে দিবে। যদি তা সম্ভব না হয় তিন মাস রাখবে অন্যথায় একমাস। তাও সম্ভব না হলে অন-ত ছয়দিন রাখবে। একথা বলে তিনি জালালী অবস’ায় উপনীত হয়ে ঘুরে ঘুরে তাঁর জবান পাকে বলেছিলেন ‘এয়া আমিরুজ্জমান’ প্রতি প্রতিউত্তরে তিনি বলেছিলেন ‘লাব্বাইকা’ এরপর তিনি স্বাভাবিক অবস’য় ফিরে আসেন। এ মহান অলি ৩ মে ১৯২৭ ইংরেজী, ১২ জিলক্বদ, ২০ বৈশাখ রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ ঘটিকায় স্বীয় হুজরা শরীফে ইন্তিকাল করে মহান রাব্বুল আলামীনের সান্নিধ্যে চলে যান । (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)।
জানাযা : হযরত আমিরুল আউলিয়া শাহসূফী সৈয়দ আমিরুজ্জমান শাহ্ (ক)’র জানাযায় নামাযের নির্ধারিত সময়ে লোকজন আমির ভাণ্ডার হুমাড়িয়া বিলে জমায়েত হল এবং জানাযার নামাজের ইমামতির প্রস’তির সন্ধিক্ষণে বড় মিয়া হযরত সৈয়দ সোলায়মান শাহ্ (রহ) স্বীয় আব্বাজানের প্রতি অতীব ভক্তির কারণে কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎ বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন। অতঃপর নামাযের ইমামতি করেন চন্দনাইশের সাতবাড়ীয়া গ্রাম নিবাসী আমিরুল আউলিয়া প্রধান খলিফা হযরত মাওলানা আবদুর রশিদ শাহ্ ।
হযরত আমিরুল আউলিয়া শাহসূফী সৈয়দ আমিরুজ্জমান শাহ্ (ক)’র
ফয়েজপ্রাপ্ত খলিফাদের নামের তালিকা
১. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রশিদ শাহ্ (রহ), চন্দনাইশ।
২. হযরত মুহাম্মদ আফিউদ্দীন (রহ), পটিয়া।
৩. হযরত আমজু মিয়া (রহ), পটিয়া।
৪. হযরত কবি মুহাম্মদ আলী আহমদ (রহ) আমিরভাণ্ডার, মল্লবাড়ি, পটিয়া।
৫. হযরত মুহাম্মদ আবদুল জলিল ফকির (রহ), বোয়ালখালী।
৬. হযরত মুহাম্মদ মনছফ আলী (রহ), পটিয়া।
৭. হযরত মুহাম্মদ নূর উদ্দীন (রহ), পটিয়া।
৮. হযরত মুহাম্মদ রহম আলী ফকির (রহ), হাসখামা, আনোয়ারা।
৯. হযরত মুহাম্মদ মনছুর আলী (রহ), সারোয়াতলী, বোয়ালখালী।
১০. হযরত মুহাম্মদ আবদুল মজিদ ফকির (রহ), আনোয়ারা।
১১. হযরত মুহাম্মদ ছিদ্দিক ফকির (রহ)
১২. হযরত অলি আহমদ (রহ), রাঙ্গুনিয়া।
১৩. হযরত মুহাম্মদ মনছুর আলী (রহ), পটিয়া।
১৪. হযরত মুহাম্মদ কালা মিয়া ফকির (রহ), পটিয়া।
১৫. হযরত পেঠান ফকির (রহ), পটিয়া।
১৬. হযরত মুহাম্মদ চাঁদ বকসু ফকির (রহ), বোয়ালখালী।
১৭. হযরত মুহাম্মদ ওমদা ফকির (রহ), সারোয়াতলী, বোয়ালখালী।
১৮. হযরত মুহাম্মদ ফজর রহমান ছুফি মনচর (রহ), বোয়ালখালী।
১৯. হযরত অছিয়র রহমান (রহ), বোয়ালখালী।
হযরত আমিরুল আউলিয়া শাহসূফী সৈয়দ আমিরুজ্জমান শাহ্ (ক)’র
ফয়েজপ্রাপ্ত মহিলাদের নামের তালিকা
১. হযরত সৈয়দা ওয়াছ খাতুন (রহ)’র আমিরুল আউলিয়া (ক)’র বড় বিবি।
২. হযরত সৈয়দা ফাতেমা খাতুন (রহ)’র আমিরুল আউলিয়া (ক)’র মেঝ বিবি।
৩. হযরত সৈয়দা লালজান বিবি (রহ)’র ছোট বিবি।
৪. হযতর অলি বিবি (রহ)।
৫. হযরত সৈয়দা মেয়াছ খাতুনের মা (রহ), গামিগাঁও।
৬. হযরত রাহাতুন নিছা (রহ), পটিয়া।
৭. হযরত সৈয়দা মাইমুনা খাতুন আমিরী (রহ) আমিরুল আউলিয়া (ক)’র মেয়ে।
৮. হযরত আতর জান বিবি আমির (রহ), পটিয়া।